হীরা ও কয়লা দুটি জিনিসের সঙ্গেই আমরা পরিচিত। একটি অত্যন্ত সস্তা, আরেকটি অত্যন্ত দামি। তবে দুটির মধ্যে একটা চমৎকার মিল রয়েছে। তা হলো দুটিরই মূল উপাদান কার্বন। চমৎকার মিল থাকা সত্ত্বেও হীরা কেনো এত দামি আর কয়লা কেনো সস্তা ভেবে দেখেছেন? বলছি, কারণটা হলো দুটি পদার্থের অণুর গঠনগত পার্থক্য। হীরার ভেতরে কার্বনের অণুগুলোর পারস্পরিক বন্ধন অত্যন্ত মজবুত ও সুদৃঢ় হওয়ায় এটি পৃথিবীর সবচেয়ে শক্ত ধাতু। অন্যদিকে কয়লার অভ্যন্তরে কার্বন অণুগুলোর নড়বড়ে অবস্থার কারণে কয়লা নরম প্রকৃতির। যেমন- আমাদের নিত্যব্যবহার্য পেনসিলের শীষও কিন্তু এক ধরনের কয়লা। অবশ্য এটি বিজ্ঞানের ভাষায় গ্রাফাইট নামে পরিচিত। বিজ্ঞানের ছাত্রদের ভালো বোঝার কথা। যাই হোক, হীরা ও কয়লার ভেতরে কার্বনের বন্ধনে পরিবর্তন এনে দুটিরই মূল্যমান বাড়ানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে ন্যানোটেকলজি ব্যবহারের মাধ্যমে। কারণ এ প্রযুক্তির কল্যাণে প্রযুক্তি সামগ্রীর উৎকর্ষ ঘনঘনই শোনা যাচ্ছে। সেটা হীরা ও কয়লার কার্বন কাঠামোর উন্নয়নেও ব্যবহার হওয়টা বিচিত্র নয়।
বর্তমানে বিজ্ঞানপ্রেমী পুরো বিশ্ববাসীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু এই ন্যানোপ্রযুক্তি। প্রযুক্তি সামগ্রীকে কতটা হাতের মুঠোয় আনা যায় এটাই একমাত্র লক্ষ্য সবার। চাই সেটা কম্পিউটারের ওই ক্ষুদ্র প্রসেসরের ক্ষেত্র হোক বা আকাশপানে ছুটে চলা বৃহৎ রকেটের ক্ষেত্রেই হোক। যেমন- কয়েক বছর আগেও প্রযুক্তিপ্রেমী মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল ডেস্কটপ পিসিগুলো। এখন ডেস্কটপ ছাড়িয়ে ল্যাপটপের ছড়াছড়ি। তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টি আরও অগ্রসর হয়ে নোটপ্যাড, আইপ্যাডের দিকে নিক্ষিপ্ত রয়েছে। আগেকার বিশালদেহী ডেস্কটপের কাজ তো করাই যায় এখন পকেটে বহনযোগ্য নোটপ্যাড, আইপ্যাডে। চার-পাঁচ বছর আগেও ২০-৩০ গি.বা. হার্ডডিস্কের বেশ চাহিদা ছিল। এখন ৫০০-১০০০ গি.বা. বা এক ট্রাবাইট মোবাইল হার্ডডিস্ক পকেটে নিয়ে ঘোরা যায়। যখন-তখন যেকোনো কম্পিউটারে যুক্ত করে ব্যবহার করা যায়। সুতরাং ন্যানোপ্রযুক্তি যে শুধু প্রযুক্তি সামগ্রীকে বড় থেকে ছোটই করছে তা নয় বরং হাল্কা ও সহজে বহনযোগ্যও করছে। আগে বিশালদেহী যেসব রকেট মহাকাশে পাঠানো হতো। এখন একই আকৃতি বা তারচেয়েও বড় রকেট বিজ্ঞানীরা মহাকাশে পাঠাচ্ছেন। তবে এগুলো ওজনে মহাকাশ অভিযানের শুরুর দিকের রকেটগুলোর তুলনায় অত্যন্ত হালকা। ফলে আগেরগুলোর তুলনায় এগুলো খুবই দ্রুতগতি সম্পন্ন। এসব কারণে বলা যায় সামনের দিন হবে ন্যানো-টেকনোলজির যুগ। হয়তো ভবিষ্যতে দেখা যাবে কারও হৃদরোগ হয়েছে। ন্যানো রোবট পাঠিয়ে দেয়া হবে শরীরে। ভেতরের সবকিছু ঠিক করে আপনাকে করে তুলবে নিরোগ।
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে ন্যানোটেকনোলজি নিয়ে বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানমনস্ক লোকের কেনো এত আগ্রহ। সারা বিশ্বে প্রতিনিয়তই চলছে এ প্রযুক্তি নিয়ে নতুন নতুন গবেষণা। তবে এ ক্ষেত্রেও প্রযুক্তির বরপুত্র জাপানই এগিয়ে বলা চলে। পত্র-পত্রিকায় দেখা গেছে দেশটির জাতীয় গবেষণা বাজেটের সিংহভাগই ব্যবহার হচ্ছে ন্যানোটেকনোলজি সংক্রান্ত কাজে। শুধু জাপানই নয়-ইউরোপ, আমেরিকা, চীন, কোরিয়া সব দেশই উঠেপড়ে লেগেছে ন্যানোপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিত্যনতুন উদ্ভাবনে।